Fall of the USSR
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন
Fall of USSR in bengali |
মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো প্রথম দেশ, মহাকাশে মানুষ পাঠানো প্রথম দেশ, চাঁদে প্রথম জীব পাঠানো দেশ এভাবে একদিন ভেঙে যাবে কেউ হয়তো ভাবেনি । কী এমন হয়েছিল এরম একটা বিশাল দেশের পতন হয়ে গেল ?
১৯৯১ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫ টি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায় এবং বিশ্ব ম্যাপে কিছু নতুন দেশের আগমন ঘটে । সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরো এশিয়া মহাদেশ থেকে ইউরোপ অবদি বিস্তৃত ছিল । সেই বিভাজিত দেশগুলি হল বর্তমানের ইউক্রেন, লাতভিয়া,লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, বেলারুশ, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, মলদোভা এমনকি সম্পূর্ন কেন্দ্রীয় এশিয়া যা হল কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,তাজিকিস্তান, কিরি গিস্তান এবং আজকের রাশিয়া ।
(Fall of USSR in bengali)
১৯১৭ সালে রাশিয়ান রিভলিউশন ঘটে এবং রাজকীয় জার শাসনের অবসান ঘটে । ক্রান্তি এর সময় ভ্লাদিমির লেনিন পরিচালিত বলসেভিক পার্টি পরে কমিউনিস্ট পার্টি অফ সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিণত হয় । ১৯২২ সালে সম্পূর্ন USSR সংঘটিত হয়। ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যু হয় এবং জোসেফ স্ট্যালিন ক্ষমতায় আসে । কার্ল মার্ক্সের কমিউনিস্ট আইডিওলজি তে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসে। স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেয় যেমন অর্থনৈতিক, লোকজনের উপর শাসন, শিল্প ভিত্তিক ক্রিয়াকর্ম । তিনি অনেক পলিসি নিয়ে আসেন । যেখানে সাধারন লোকজনের কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না । যেসব লোক তার পলিসির বিরোধিতা করত তাকে খুব কঠিন শাস্তি দেওয়া হত এমনকি মেরেও ফেলা হত । অনেক লোক স্ট্যালিন কে হিটলারের থেকেও কঠোর মনে করেন । বলা হয়ে থাকে স্ট্যালিন লক্ষ্য লক্ষ্য নিজের দেশের মানুষদের হত্যা করেছিলেন । ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিনের মৃত্যু হয়, নতুন শাসক ক্ষমতায় আসেন এবং স্ট্যালিনের কিছু নীতির দমন ঘটে কিন্তু কমিউনিস্ট শাসন চলতে থাকে ।
১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আসেন । USSR এর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ হয়ে গিয়েছিল , আমেরিকার প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল সোভিয়েত এর জিডিপি । গর্বাচেভ ক্রান্তি আনতে চেয়েছিলেন এবং কিছু নতুন নীতির ঘোষনা করেন । তিনি দুটি নীতি নিয়ে এসেছিলেন সোভিয়েত কে সবদিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন নিয়ে।
( Fall of USSR in bengali)
প্রথম নীতিটি ছিল গ্লাসনট একটি রাশিয়ান শব্দ। এই নীতি স্ট্যালিন প্রচলিত নীতির সম্পূর্ন উল্টো ছিল। এটি সোভিয়েত জনগন কে নতুন স্বাধীনতা দিয়েছিল । আগে যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে বললে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত, এই নীতি অনুযায়ী সংবাদ মাধ্যম সরকারের সমালোচনা করতে পারত, যে কেউ সরকারের কোনো কাজের উপর প্রশ্ন করতে পারত ।
দ্বিতীয় নীতিটি ছিল পেরেস্ত্রইকা বা অর্থনৈতিক পুনর্গঠন । গর্ভাচেভ মনে করত অর্থনীতি সম্পুর্নভাবে সরকার এর হাতে নিলে দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি তেমন হবে না । প্রথম বার কোনো ব্যাক্তি বা সংস্থাকে অধিকার দেওয়া হয়েছিল যে তারা কোনো ব্যাবসার সম্পূর্ন মালিক হতে পারবে । যেটা তাদের কমিউনিস্ট ভাবধারায় সরকারের আয়ত্বে থাকত। ১৯২০ সাল থেকে প্রথমবার মজুর দের স্ট্রাইক করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তাদের সমস্যা কে তুলে ধরতে পারত ।
গর্বাচেভ এর নীতি অনুযায়ী, লোকেদের তখন সম্পূর্ন বাকস্বাধীনতা ছিল । জনগণ সরকারের বিরোধিতা করতে শুরু করেছিল এবং আগমন ঘটেছিল বিভিন্ন স্বাধীনতার আন্দোলন । তুর্কমেনিস্তান এর লোকেরা স্বাধীন হওয়ার আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিল ।
১৯৮৯ সাল, যাকে ক্রান্তি এর বছর বলা হয় , USSR এর প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া,রোমানিয়া ,যেখানে কমিউনিস্ট সরকার ছিল, বিপ্লব ঘটে ও সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির অবসান ঘটে । যে সমস্ত কমিউনিস্ট দেশ অস্তিত্বে ছিল তারা USSR এর আদেশে চলত । এই সমস্ত দেশে কমিউনিজম এর পতন USSR এর বিভাজনের একটি কারন হয়ে উঠেছিল । ক্রান্তি এর সেই বছরে, বার্লিন ওয়াল এর পতন ঘটে , সেই বার্লিন ওয়াল যেটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি কে পৃথক করে রেখেছিল, পূর্ব জার্মানিকে সোভিয়েত শাসন করত । জার্মানি এক হয়ে যায় এবং বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে কমিউনিজম এর অবসান ঘটে ।
এই বিপ্লব পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে এবং সোভিয়েত এর বিভিন্ন রাষ্ট্র স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নেমে পড়ে । এস্তোনিয়া,লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া নিজেদের স্বাধীন ঘোষনা করে এবং প্রথম তিনটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়, সোভিয়েত এর বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইলেকশন হয় এবং সব রাষ্ট্রে কমিউনিস্ট পার্টির হার হয় । শেষে কমিউনিস্ট পার্টি ষড়যন্ত্র করেও আর সামলাতে পারে না । সোভিয়েত এর বিভাজন হয়ে যায় ।
২১ ডিসেম্বর ১৯৯১ তে গর্বাচেভ অফিসিয়ালি সমস্ত রাষ্ট্রকে স্বাধীন রাষ্ট্রের আখ্যা দিয়ে দেয় । সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংস হয়ে যায় ।
( Fall of USSR in bengali)
0 Comments